ম্যাগনেসিয়াম একটি অত্যাবশ্যক খনিজ যা মানবদেহের বিভিন্ন জৈব প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি প্রোটিন সংশ্লেষণ, স্নায়ু সঞ্চালন, পেশীর সংকোচন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণসহ ৩০০-রও বেশি এনজাইম্যাটিক প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। অথচ, ভারতে বহু মানুষ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন — যা ধীরে ধীরে ঘাটতির দিকে নিয়ে যায়।
ম্যাগনেসিয়ামের ভূমিকা
মানবদেহে ম্যাগনেসিয়ামের মূল কার্যাবলি হল:
- শক্তি উৎপাদনে সহায়তা (ATP কার্যকারিতা)
- স্নায়ু ও পেশী সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ
- হৃদস্পন্দনের নিয়মিততা বজায় রাখা
- হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা
- রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা
ভারতে ঘাটতির সম্ভাব্য কারণসমূহ
- খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন: শহুরে এলাকায় প্রক্রিয়াজাত ও জাঙ্ক ফুড নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের (যেমন, শাকসবজি, বাদাম, দানাশস্য) গ্রহণ কমে গেছে।
- অতিরিক্ত সার ব্যবহারে মাটি থেকে খনিজ হারিয়ে যাওয়া: ভারতের বহু অঞ্চলে মাটিতে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে, ফলে সেখান থেকে উৎপন্ন ফসলেও এই খনিজের পরিমাণ কম।
- হজম সংক্রান্ত সমস্যা: IBS, Celiac Disease, Crohn’s Disease-এর মতো রোগে পুষ্টি শোষণে ব্যাঘাত ঘটে, যার ফলে ম্যাগনেসিয়াম শোষণ কমে যায়।
- ডায়াবেটিস ও ওষুধ: ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায়ই মূত্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম বেরিয়ে যায়। এছাড়াও ডিউরেটিকস, অ্যান্টাসিড, ও কিছু অ্যান্টিবায়োটিক এই খনিজের ঘাটতির জন্য দায়ী।
উপসর্গসমূহ (Symptoms)
ঘাটতির উপসর্গ গুলো ধীরে ধীরে দেখা দেয় এবং সাধারণত উপেক্ষিত থাকে, যেমন:
- পেশীতে খিঁচুনি ও দুর্বলতা
- অনিদ্রা
- অবসাদ
- হৃদস্পন্দনের অনিয়ম
- হজমে সমস্যা
- চোখের পাতা কাঁপা
- চরম ঘাটতির খিঁচুনি বা অ্যারিদমিয়া পর্যন্ত হতে পারে।
ডায়াগনোসিস
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তবে অধিকাংশ ম্যাগনেসিয়াম কোষে অবস্থান করে বলে রক্ত পরীক্ষা সব সময় নির্ভুল ধারণা দেয় না। তাই উপসর্গ ও রোগীর ইতিহাস বিবেচনা করেই চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা হয়।
উপসংহার
যারা আমার রুগী, তাঁরা সবাই ম্যাগনেসিয়াম সল্ট খেয়েছেন। ব্র্যান্ডগুলো আপনারা জানেন। বাড়িতে ২-৩ খানা ট্যাবলেট বা ওষুধের দোকান থেকে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট কিনে রাখবেন। দরকারে লাগতে পারে। আমি আগেই আলোচনা করেছি যে ORS এ পটাসিয়াম আর সোডিয়াম থাকে। যে রিংগার্স ল্যাকটেট স্যালাইন হিসেবে দেওয়া হয় তাতে পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ল্যাকটেট ইত্যাদি থাকে।
ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম অনেক ICU তে মাপা হয় না। তাছাড়া ম্যাগনেসিয়াম সালফেট IV দেওয়া বেশ বিপজ্জনক। গর্ভবতী মহিলাদের খিঁচুনি হলে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট IV দেওয়া হয়। কিভাবে সেটা কাজ করে সেটা পুরো জানা নেই কিন্তু খিঁচুনি কমে যায়।