টাইপ ২ ডায়াবেটিস বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অন্যতম সাধারণ এবং দীর্ঘমেয়াদী অসংক্রামক রোগ। এই রোগের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা ব্যয়বহুল হতে পারে, যা রোগী এবং তাদের পরিবারের জন্য আর্থিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। চিকিৎসার ব্যয় নির্ভর করে বিভিন্ন উপাদানের উপর, যেমন ঔষধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ডাক্তারি পরামর্শ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার খরচ।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার প্রধান উপাদানসমূহ ও ব্যয়
১. ওষুধের খরচ টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধের মধ্যে মেটফরমিন, সালফোনাইলইউরিয়া, ডিপিপি-৪ ইনহিবিটর, এসজিএলটি-২ ইনহিবিটর এবং ইনসুলিন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
- মেটফরমিন: এটি তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং মাসিক ব্যয় ৩০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। অন্যান্য নতুন ওষুধ উন্নত মানের কিন্তু দাম প্রতি ট্যাবলেট ১৮ থেকে ৩০ টাকা।
- ইনসুলিন: ইনসুলিনের ধরন ও ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে মাসিক ব্যয় ১০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
- অন্যান্য ঔষধ: অন্যান্য ওষুধের খরচ সাধারণত ৩০০০ টাকা প্রতি মাসে হতে পারে।
২. ইনসুলিন ও ইনজেকশন ডিভাইসের খরচ টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য অনেক রোগীকে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়।
- ইনসুলিন পেন বা সিরিঞ্জ: প্রতি মাসে ১০০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা ব্যয় হতে পারে।
- ইনসুলিন পাম্প: এটি অধিক ব্যয়বহুল, এবং একবার স্থাপন করতে ৪ লক্ষ টাকা হতে পারে খরচ হতে পারে, সঙ্গে বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় তিন লক্ষ টাকা হতে পারে ।
৩. ব্লাড সুগার পর্যবেক্ষণের খরচ
- শর্করা মিটার: একটি ভালো মানের শর্করা মিটার কিনতে দু হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
- টেস্ট স্ট্রিপ: প্রতি মাসে ব্যবহার অনুযায়ী খরচ দু হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
- সেন্সর ভিত্তিক সিস্টেম (CGM): উন্নত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, যার খরচ মাসে কুড়ি হাজার টাকা হতে পারে।
৪. ডাক্তার ও স্বাস্থ্যসেবা খরচ
- কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য প্রতি বার পরিদর্শনের খরচ দু হাজার টাকা হতে পারে।
- বার্ষিক পরীক্ষা, যেমন HbA1c, কিডনি ফাংশন টেস্ট, লিপিড প্রোফাইল ইত্যাদির জন্য দু হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
৫. খাদ্য পরিকল্পনা ও জীবনধারা পরিবর্তনের খরচ
- ডায়াবেটিস উপযোগী খাবারের জন্য মাসিক ব্যয়।
- একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণের জন্য প্রতি সেশন খরচ।
চিকিৎসার ব্যয় কমানোর উপায়
- বীমা কাভারেজ: স্বাস্থ্যবীমা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ ও চিকিৎসা খরচ আংশিক বা সম্পূর্ণ কভার হতে পারে।
- সরকারি ও এনজিও সহায়তা: কিছু দেশে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা বিনামূল্যে বা কম খরচে ওষুধ ও চিকিৎসা সরবরাহ করে।
- জেনেরিক ওষুধ ব্যবহার: ব্র্যান্ডেড ওষুধের পরিবর্তে জেনেরিক ওষুধ ব্যবহার খরচ কমাতে পারে।
- নিয়মিত চেকআপ: সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চললে জটিলতা কমে, ফলে ব্যয়ও কমে।
- সুস্থ জীবনধারা: স্বাস্থ্যকর খাবার ও ব্যায়াম করলে ওষুধের উপর নির্ভরতা কমানো যায়।
উপসংহার
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যয়বহুল হতে পারে, তবে সঠিক পরিকল্পনা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। চিকিৎসার ব্যয় কমানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা নেওয়াও একটি ভালো উপায় হতে পারে।
খুব সোজা ভাষায়, আমার চিকিৎসায় ব্লাড সুগার ৩০০ এর ওপরে গেলে মাসে খরচ ৬০০০ টাকা হতে পারে (সেই প্রোটোকল ইউরোপ এবং আমেরিকাতে ফলো করা হয়)। তাতে আপনার কিডনি, রেটিনা, হার্ট বাঁচবে এবং প্রায় স্বাভাবিক আয়ু হবে। আপনার কিডনি বা রেটিনা খারাপ হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের খরচ অনেক। দয়া করে রুগীরা প্রথম অবস্থা থেকে আমার কথা মেনে চলুন।
আরো পড়ুন: